বিজুর বিচার চাই
জয়নাল হাজারি
Rob Owen

বিজুর বিচার চাই। খুবই আলোচিত সংলাপ। এই সংলাপের নিশ্চয়ই কারণ আছে। বিজুর গল্প অভিনেতা স্বাধীন খসরুকে শুনিয়েছিলেন জয়নাল হাজারী। প্রয়াণের দিনে এসব কথাই স্মরণ করলেন অভিনেতা।

1

তার লেখাটি হুবহু এখানে দেওয়া হলো- ‘মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে ছিলেন পাক হানাদার বাহিনীর সাক্ষাৎ যম। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী তিনি ছিলেন রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধীদের যম। বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী ছিলেন একজন বহুল আলোচিত, সমালোচিত দেশপ্রেমিক এক সাহসী

2

রহস্যময় পুরুষ। ইতিহাস, ধর্ম, সাহিত্য বা বিশ্বের যেকোনো বিল্পবী নেতাদের সম্পর্কে তিনি ছিলেন জ্ঞানগর্ভ।’
তার ভাষায়,
"আমি যখন ফেনী কলেজের ছাত্র ছিলাম। সেও ফেনী কলেজের ছাত্রী ছিলেন। সে গান গাইতো। আমি গীতি নকশা করতাম। আমি স্টেজে কথা বলতাম।

3

সে গান গাইতো। এভাবেই আমাদের ভালো সম্পর্ক ও প্রেম হয়। কিন্তু যুদ্ধের সময় আমি যখন যুদ্ধে চলে গেলাম। তখন তার বাপসহ, তার বাবা দক্ষিণপন্থী ছিলেন। তারা সোনাদিয়া এলাকায় আত্মগোপন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে বিজুর সাথে কথা ছিল- যুদ্ধ শেষে

4

স্বাধীন দেশে মহা ধুমধামে বিজুকে বিয়ে করবেন। যুদ্ধ চলাকালীন জানতে পারেন, জোর করে কোনো এক রাজাকারের সাথে বিজুর বিয়ে দেওয়া হয়েছে! প্রতিজ্ঞা করেন, যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে ওই রাজাকারকে প্রথম খুন করবেন। দেশ স্বাধীন হয়, ফিরে আসেন। ফিরে এসে জানতে

5

পারেন, জোর করে বিজুকে বিয়ে দেওয়া হয়নি। বিজু তার নিজ ইচ্ছায় স্থানীয় এক কলেজের প্রিন্সিপালকে বিয়ে করেছে। জানার পর চুপ হয়ে যান। সারা জীবন চিরকুমার থেকে যান, তিনি আর বিয়ে করেননি। বিজুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল সে আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না।

6

আমিও তাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। কিন্তু বোঝা গেল সে খুব এটা প্রেশারে পড়ে তাকে বিয়ে করেনি। যুদ্ধের সময়ই খবর পাচ্ছিলাম যে বিজুর হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আমি তাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসতে পারতাম। যেহেতু আমার দল ছিল ক্যাডার ছিল। তখন কোন

7

প্রশাসনের ধার ধারতে হত না। আমিই ফেনী পরিচালনা করি। আমরা যে ওয়াদা করেছিলাম। সেটা সে রাখেনি। পরবর্তীতে এর কোন প্রতিকারও সে করেনি। কেন সে ওয়াদা ভঙ্গ করলো সেটার জন্যই আমি বিচার চেয়েছি। বিজুর সঙ্গে পরবর্তীতে কখনো আমার কথা্ হয়নি। সে একটা স্কুলে

8

মাস্টারি করতো। সেখান থেকে রিটার্ড করেছে। রিটার্ড অনুষ্ঠানে আমাকে অতিথি করার জন্য স্কুল থেকে ফোন দিয়েছে। কিন্তু আমি যাইনি। আর এজন্যই আমি চিরকুমার।’
বিজুর স্বামী মারা গেছে। ওর একটা ছেলে কানাডা থাকে। সবাই বলে জয়নাল হাজারির ছেলে। যেহেতু

9

বিয়েরে আগে বিজুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এটা পুরোপুরিই মিথ্যে যে সে আমার ছেলে। কারণ এমন কিছুই আমাদের ছিল না।’
আমি ছোটবেলা থেকেই সুভাষ বসুর অনুসারী। সে সাদা পছন্দ করতেন। আমিও তাই সাদা পছন্দ করি।"

10

ফেনীর রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে আলোচিত ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী চির প্রস্থানের পথে যাত্রা করেছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে অনেকটা নিভৃতচারী হয়ে উঠলেও আলোচনা ও বিতর্ক তাকে পিছু ছাড়েনি। রাজনীতিতে নামিদামি

11

থেকে শুরু করে জনসাধারণ পর্যায়ে বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সঙ্গিনীর বাহুডোঁরে বাঁধা পড়া হয়নি তার। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকদের ৫০ পেরোনো বয়সে বিয়ে ও ঘর-সংসার করতে দেখা গেলেও এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমৃত্যুই

12

ছিলেন ‘চিরকুমার’।

কিন্তু কেন তার এই একলা যাপন? কেন চার হাত এক হয়নি তার? কেনইবা কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেননি? সদ্য মারা যাওয়া জয়নাল হাজারীর অবিবাহিত জীবন নিয়ে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে জনমানুষের মধ্যে কৌতূহলে কখনোই ভাটা পড়েনি।

13

তিনি নিজেও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে একাধিকবারই ব্যক্তিগত জীবনের বাহাস শুনিয়েছেন। তবে চিরকুমার জয়নাল হাজারী কখনোই অবিবাহিত জীবনকে কোনো ‘গ্যাপ বা শূন্যতা’ হিসেবে স্বীকার করেননি।

বিয়ে না করার পেছনে ‘বিজু’ নামের এক তরুণীর সঙ্গে এই

14

রাজনীতিকের সম্পর্ক ও বিচ্ছেদের কাহিনি অনেকবারই সামনে এসেছে। নিজের লেখা ‘বিজুর বিচার চাই’ নামের বইতেও ওই নারীর সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের নানা মুহূর্ত উঠে আসে। বইটি ব্যাপক আলোচনায় এসেছিল।

১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছরের বেশি সময় ফেনী

15

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা জয়নাল হাজারী ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক ছিলেন।

বিয়ে না করা প্রসঙ্গে ক’বছর

16

আগেই জয়নাল হাজারী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এটা আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনো ‘গ্যাপ’ নয়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদি বলি- অনেক বাম রাজনীতিক যারা কমিউনিস্ট বা কংগ্রেস পার্টি করতেন তারা বিয়ে করেননি। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যদি দেখি পৃথিবীর অনেক

17

দার্শনিক, বিজ্ঞানীও বিয়ে করেননি, বিয়ে নিয়ে চিন্তাও করেননি। বিয়ে হলো কি হলো না, চিরকুমার থাকলাম কি থাকলাম না- এটি রাজনীতির কোনো বাধাও নয়, পরিপূরকও নয়।
তার ভাষ্য ছিল এরকম- আমার যখন বিয়ের বয়স তখন আমি সেই ’৬৯, ’৭০, ’৭১-এর উত্তাল সময়ে

18

ছিলাম। তখন প্রেম, বিজু ও বিয়ে নিয়ে চিন্তা করার সময় ছিল না। এরপর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে ছয় মাসের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাই। আসলে আমার জীবনটা সবসময় বিপদসংকুল ছিল। ফলে বিয়েটা আর করা হয়নি।

সেই আলোচিত নারী বিজু সম্পর্কে জয়নাল

19

হাজারী বলেন, বিজু বাস্তব আবার কাল্পনিকও। বিজুকে নিয়ে আমি অসংখ্য গল্প লিখেছি। বাস্তবের যে বিজু সেই বিজুকে যেভাবে আমার গল্পে চিত্রায়িত করা হয়েছে সেভাবে কোনোদিনই ভালোবাসিনি। এটি ছিল আগাগোড়াই কাল্পনিক।

20
You are free to download, copy, translate or adapt this story and use the illustrations as long as you attribute in the following way:
বিজুর বিচার চাই
Author - জয়নাল হাজারি
Illustration - Rob Owen
Language - None
Level - First paragraphs